সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছেন? এই প্রস্তুতিগুলো নিয়ে রাখুন
নভেম্বর থেকে মার্চ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের মৌসুম। তাই দ্বীপজুড়েই এখন জোর প্রস্তুতি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা হোটেল-রিসোর্টগুলো মেরামত করা হচ্ছে, রঙে-ঢংয়ে কোনো কোনোটা নতুন করে সাজিয়ে তোলার কাজ করা হচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন রিসোর্ট। তাই সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সব তথ্য বা ট্যুর প্ল্যান, কম খরচে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ, সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জাহাজ ভাড়া, টিকেট বুকিং, সরাসরি কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাবার উপায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি, সেন্টমার্টিন ভ্রমনের, হোটেল ও রিসোর্ট খরচ সহ বিস্তারিত ভ্রমণ গাইডলাইন পেয়ে যাবেন আজকের এই লেখাতে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এখন পর্যটক বরণের জোরালো প্রস্তুতি।
এই প্রস্তুতির মধ্যেই টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে শুরু হয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ২৬ সেপ্টেম্বর জাহাজ চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এখন পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি জাহাজ প্রতিদিন চলাচল করছে। যাঁরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যাবেন বলে ভাবছেন, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ—
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সাগরের মাঝখানের ক্ষুদ্র দ্বীপটি ‘নারিকেল জিনজিরা’ নামেও পরিচিত। সেন্ট মার্টিন যেতে প্রথমে টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজঘাটে যেতে হবে। এখান থেকেই ছাড়ে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ।
ঢাকার
ফকিরাপুল, আরামবাগ, সায়েদাবাদসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসি
ও নন–এসি বাসে
করে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়। মান
বিবেচনায় ঢাকা থেকে টেকনাফের
বাসভাড়া ১ হাজার ১০০
থেকে ২ হাজার ৫০০
টাকা।
কক্সবাজার
ঘুরে যাঁরা সেন্ট মার্টিন যেতে চান, তাঁদের
কাকডাকা ভোরে বের হতে
হবে। কক্সবাজার
থেকে দুই–আড়াই ঘণ্টা
সময় লাগে। কক্সবাজারের
কলাতলীর ডলফিন মোড় থেকে মেরিন
ড্রাইভ সড়ক দিয়ে প্রাইভেট
কার, সৈকত এসি পরিবহন
ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দমদমিয়া জাহাজঘাটে
যাওয়াই ভালো।
জাহাজের
টিকিট
ঢাকা,
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন
বাস কাউন্টারে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজের টিকিট পাওয়া যায়, বিভিন্ন ট্রাভেল
এজেন্টও টিকিট বিক্রি করে। প্রতিটি
জাহাজের নামেই ফেসবুক পেজ আছে, সেখান
থেকেও টিকিট বুকিংয়ের তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি
টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজঘাট এলাকায় প্রতিটি জাহাজের টিকিট কাউন্টার রয়েছে, সরাসরি কাউন্টার থেকেও টিকিট সংগ্রহ করা যাবে।
তবে যেভাবেই হোক আগেভাগে টিকিট
কেটে যাওয়াই ভালো।
বর্তমানে
এমভি বার আউলিয়া, কেয়ারি
সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ
অ্যান্ড ডাইন টেকনাফ-সেন্ট
মার্টিন রুটে চলাচল করছে। এই
রুটের অন্য জাহাজগুলো হলো
আটলান্টিক ক্রুজ, এসটি ভাষাশহীদ সালাম,
এমভি পারিজাত, এমভি রাজহংস, এসটি
শহীদ সুকান্ত বাবু, এমভি বে ক্রুজ।
সেন্ট মার্টিন পৌঁছে
এক বেলার জন্য সেন্ট মার্টিনে গেলে মাথায় রাখুন জাহাজ ছেড়ে আসার সময়। বেলা তিনটায় জাহাজ ধরতে না পারলে সেদিন কিন্তু থেকে যেতে হবে।
সেন্ট মার্টিনে রাত কাটাতে চাইলে আগে থেকে হোটেল-রিসোর্ট বুক করে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ছোট দ্বীপটিতে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২৩০টির বেশি।
হোটেল-রিসোর্টের রুমভেদে ভাড়া আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন। কোনো কিছু খাওয়ার আগে দরদাম করে নেওয়াই ভালো।
সেন্ট মার্টিন থেকে অটোরিকশায় ছেঁড়াদ্বীপে যেতে হয়। জোয়ার-ভাটার সময় বিবেচনা করে অটোরিকশাচালকই আপনাকে নিয়ে যাবেন।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যেকোনো তল্লাশিচৌকিতে জাতীয় পরিচয়পত্র কাজে লাগতে পারে।
সেন্টমার্টিন যেতে কত টাকা লাগবে?
সেন্টমার্টিন
ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ নির্ভর করে
কোন মানের জাহাজে যাওয়া আসা হবে, কেমন
মানের রিসোর্টে রাখবে এবং অন্যান্য সুযোগ
সুবিধার উপর। সাধারণত
ট্যুর এজেন্সির প্যাকেজ প্রাইস গুলো ঢাকা থেকে
যাওয়া আসা সহ জনপ্রতি
৫,৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে
হয়ে থাকে।
ভৌগোলিক
আয়তন
সেন্ট
মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার
ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এ
দ্বীপের তিন দিকের ভিত
শিলা যা জোয়ারের সময়
তলিয়ে যায় এবং ভাটার
সময় জেগে ওঠে।
এগুলোকে ধরলে এর আয়তন
হবে প্রায় ১০-১৫ বর্গ
কিলোমিটার। এ
দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায়
৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা।
ইনানী
থেকে সেন্টমার্টিন ভাড়া কত?
জাহাজটিতে
দ্বীপে আসা ও যাওয়ার
ক্ষেত্রে টিকেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১
হাজার ৮০০ টাকা থেকে
৩ হাজার ২০০ টাকা।
পর্যটকরা মেরিন ড্রাইভ হয়ে সমুদ্র উপভোগ
করে সকালেই সমুদ্র পথে যাত্রা দেবেন
প্রবাল দ্বীপে। সাগরের
সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
টেকনাফ
টু সেন্টমার্টিন কত সময় লাগে?
জাহাজে
চড়ে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন
দ্বীপে যেতে পর্যটকদের আড়াই
থেকে তিন ঘণ্টা সময়
লাগে।
সেন্টমার্টিন
থেকে ছেড়া দ্বীপের ভাড়া কত?
সেন্টমার্টিন
থেকে ছেঁড়া দ্বীপ: সেন্টমার্টিনের জেটি থেকে ছেঁড়া
দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন
চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ছেঁড়া
দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া সাধারণত সিজনের উপর নির্ভর করে। পর্যটনের
মৌসুমভেদে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০
টাকায় ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে
পারবেন।
সেন্টমার্টিন
দ্বীপে কি কি পাওয়া
যায়?
দ্বীপটিতে
কিছু কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন হয়ে থাকে।
তবে তা প্রয়োজনের তুলনায়
খুবই নগণ্য। সেন্ট
মার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল,
১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক
শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী
উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক
মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর
ও ১২০ প্রজাতির পাখি
পাওয়া যায়।
সেন্টমার্টিন
দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
শীত ও বসন্তকাল; অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত
কোন মন্তব্য নেই