ads header

সাম্প্রতিক ইভেন্ট

সোনারগাঁও (Panam Nagar) দিনে দিনে ঘুরে আসার আদর্শ স্থান




সোনারগাঁও (Panam Nagar) দিনে দিনে ঘুরে আসার আদর্শ স্থান। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন "সোনারগাঁও জাদুঘর" বা "সোনারগাঁও পানাম নগর" হিসেবে পরিচিত। এখানে গেলে ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৈরি নীলকুঠি দেখতে পাওয়া যায়।
 
রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে। রুপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এক সময় মসলিনের জন্য জগত বিখ্যাত ছিল। এখানে দেখার মতো রয়েছে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প বিক্রয় কেন্দ্র, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন যাদুঘর,  এবং ফাউন্ডেশন চত্বর।

সোনারগাও নামকরনঃ

ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামানুসারে সোনারগাও এর নামকরণ করা হয়।

সোনারগাঁও (Panam Nagar) কোথায় অবস্থিতঃ

পানাম নগর বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। পানাম নগর পশ্চিমে মেঘনা নদী, পূর্বে দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম হাইওয়ে, উত্তরে বুস্টাইল-মদনপুর হাইওয়ে, দক্ষিনে মোগড়াপাড়া অবস্থিত। 

সোনারগাঁও-পানাম নগর (Panam Nagar)যাওয়ার আদর্শ সময়ঃ 

সোনারগাঁও-পানাম নগর (Panam Nagar) ঢাকার পাশে অবস্থিত হওয়ায় বছরের যেকোনো সময় ঢাকা থেকে সকাল বেলায় রওনা দিয়ে সারাদিন ঘুড়ে সন্ধ্যায় আবার ঢাকায় ফেরত আসা যায়। পানাম সিটি ভ্রমণের সর্বোত্তম সময় হচ্ছে শীতের মাস, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, যখন আবহাওয়া শুষ্ক, রৌদ্রোজ্জ্বল এবং শীতল থাকে। এই সময়ে তাপমাত্রা 15°C থেকে 25°C এর মধ্যে থাকে, যা বাইরের ক্রিয়াকলাপ যেমন ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেশ মনোরম এবং আরামদায়ক। 
সাধারনত বর্ষা মৌসুমে পানাম নগরের আশেপাশের এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয় এবং বাইরের কার্যকলাপের জন্য বেশ আর্দ্র এবং অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত গ্রীষ্মের মাসগুলিও বেশ গরম এবং আর্দ্র হতে পারে, তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়, যা পায়ে হেঁটে ঐতিহাসিক শহরটি ভ্রমণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে যায়। তাই বলাই যায় শীতের মাসে পানাম সিটি পরিদর্শনের সেরা সময়। কারণ শীতের সময়ই  শহরটি এবং এর সমৃদ্ধ ইতিহাস জানার জন্য আবহাওয়া মনোরম এবং আরামদায়ক থাকে। ঐতিহাসিক শহর পানাম সিটি 

সোনারগাঁও-পানাম নগর (Panam Nagar) ট্যুর প্ল্যান কিভাবে করবেনঃ

সোনারগাঁও পরিবার, বন্ধুবান্দব নিয়ে সময় কাটানোর জন্য খুবই আদর্শ জায়গা। সোনারগাঁয়ের প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠে এই নগরী। একদিনের সোনারগাঁও ট্যুর প্ল্যানঃ
>প্রথমে আপনার এলাকা থেকে সুবিধাজনক মাধ্যমে সোনারগাঁও পৌঁছাবেন।
> টিকেট কেটে পানাম সিটি বা পানাম নগর প্রবেশ করবেন।
> এখানে / ঘন্টা সময় সময় দিয়ে পানাম নগরীর বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণশৈলীর অপূর্ব কারুকার্য দেখে নিতে পারবেন।
> ১/ ঘন্টা থেকে বাহিরে এসে লাঞ্চ করে নিন।
> লাঞ্চ করে সোনাবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি, ইব্রাহীম দানিশমান্দ-এর দরগা দেখে বিকাল বেলায় ঢাকা বা আপনার এলাকার উদ্দেশ্য রওনা দিতে পারেন। 

সোনারগাঁও জাদুঘরের (পানাম নগর) কিভাবে যাবেনঃ

বাস দিয়ে সোনারগাঁওঃ ঢাকার গুলিস্তান এর স্টেডিয়াম এর সামনে থেকে সোনারগাঁও গামী অনেক বাস আছে, যেমন – বোরাক,দোয়েল। ভাড়া নিবে ৪৫-৬০ টাকা। স্পেশাল বাস গুলো ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যায় তাই ভাড়া একটু বেশি হলেও সময় কম লাগে। বাসে করে সোনারগাঁ মুরগা বা মোগড়া পাড়া স্টেশনে নেমে রিক্সা অথবা সিএনজি করে সোনারগাঁ জাদুঘরের গেইটের সামনে চলে যাবেন। ভাড়া নিবে রিক্সা ২০-৩০ টাকা আর সিএনজি জনপ্রতি ১০ টাকা।

ট্রেন দিয়ে সোনারগাঁওঃ

ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে করে সোনারগাঁও গামী অনেক বাস আছে।  

সোনারগাঁও বা পানাম নগরে কোথায় থাকবেন এবং কিভাবে থাকবেনঃ 

ঢাকার আশে পাশে হবার কারনে আপনি দিনে যেয়ে দিনেই ফিরতে পারবেনতাই ওখানে থাকার চিন্তা না করলেও হবে। এরপরও যদি আপনি নারায়নগঞ্জে রাত্রিযাপন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে নারায়নগঞ্জ সদরে এসে হোটেল নিতে হবে। এই লিঙ্কে কিছু নারায়নগঞ্জে থাকার হোটেলের ঠিকানা পাবেন। পানাম নগর শহরের মধ্যে কোনো হোটেল বা গেস্টহাউস নেই কারণ এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং একটি সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ।এছাড়া আপনি যদি ঢাকার মধ্যেই থাকেন তাহলে আপনি এক দিনের মধ্যেই পানাম নগর ঘুড়ে আসতে পারবেন। সোনারগাঁওয়ের কাছাকাছি কিছু হোটেল রয়েছে, যেমনঃ সোনারগাঁও রয়্যাল রিসোর্ট, পানাম নগর গেস্টহাউস। 

সোনারগাঁও বা পানাম নগরে কি কি ঘুড়ে দেখবো এবং কিভাবে ঘুরবোঃ

সোনারগাঁও বা পানাম নগরীর বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণশৈলীর অপূর্ব কারুকার্য দেখে নিতে পারবেন। তাছাড়া সোনাবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহের সমাধি, ইব্রাহীম দানিশমান্দ-এর দরগা পায়ে হেটে বা অটো রিক্সায় যাতায়াত করতে পারবেন। 

সোনারগাঁও বা পানাম নগরে বেড়াতে গেলে কি খাবেন এবং কোথায় খাবেনঃ

পানাম নগরের আশে পাশে বেশকিছু ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে যেমনঃ ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁ, পূর্বাণী হোটেল এবং রেস্তোরাঁ, গ্রামীণ রেস্তোরাঁ, ফাস্ট ফুড কর্নার সহ আরো অনেক নাম না জানা খাবারের হোটেল রয়েছে।  

সোনারগাঁও বা পানাম নগরের মোট ট্যুর ব্যয়ঃ

একদিনের ট্যুর হিসেবে ঢাকা থেকে সোনারগাঁও বা পানাম নগরের ঘুড়ে বেড়াতে জনপ্রতি ট্যুর খরচ হবেঃ যাতায়াত (আসা যাওয়া ৫০০ টাকা, সাইটসিনের খরচ ২০০ টাকা, খাবার এবং নাস্তা ৩৫০ টাকা, টিকেট এবং অন্যান্য ১০০ টাকা। মোট ১১৫০ টাকা জন প্রতি খরচ হবে।    


সোনারগাঁও জাদুঘর (পানাম নগর) কত সালে বাংলার রাজধানী ছিলঃ

১৬১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। ঈশা খাঁ ও তাঁর বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও ছিল পূর্ববঙ্গের রাজধানী। সোনারগাঁও-এর আরেকটি নাম ছিল পানাম। পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরি।

সোনারগাঁও জাদুঘর (পানাম নগর) এর পুরাতন নাম কিঃ

 সোনারগাঁও নামের উৎপত্তি প্রাচীন শব্দ সুবর্ণগ্রাম থেকে। সোনারগাঁও প্রাচীনকালে বঙ্গ ও সমতট রাজ্য দ্বারা শাসিত ছিল। সেন রাজবংশ এলাকাটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত। দেব রাজবংশের রাজা দশরথদেব 13 শতকের মাঝামাঝি বিক্রমপুর থেকে সুবর্ণগ্রামে তার রাজধানী স্থানান্তর করেন।

সোনারগাঁও জাদুঘর (পানাম নগর) এর দর্শনীয় স্থানঃ 

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনুপম নিদর্শন সোনারগাঁ বা পানাম নগর। এখানে ১৯৭৫ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু গ্যালারি, রয়েছে কারুপল্লী, লোকজমঞ্চ, লাইব্রেরি/গ্রন্থাগার ও ডকুমেনটেশন সেন্টার। ফাউন্ডেশন চত্বরে রয়েছে জয়নুলের সংগ্রাম ভাস্কর্য, শিল্পাচার্যের আবক্ষ ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে আবক্ষ ভাস্কর্য। 

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (Sonargaon Folk Art and Craft Museum) থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গোয়ালদী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানাম নগর। প্রাচীন এ নগরীর ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান এখানে। পানাম নগরের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক পানাম পুল। যারা যাদুঘর দেখতে আসেন, তারা সাধারণত একটি বারের জন্য হলেও ঘুরে যান পানাম নগরীতে। এছাড়া এর কাছাকাছি রয়েছে আগ্রার তাজমহলের আদলে বানানো বাংলার তাজমহল।

সোনারগাঁও জাদুঘরের (পানাম নগর) সময় সূচি -খোলা-বন্ধের সময়সূচীঃ 

সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে।সোনারগাঁ জাদুঘর শুক্রবার খোলা থাকে, তবে দুপুর ১২ঃ৩০ মিনিট থেকে ২ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত মিউজিয়াম গ্যালারী প্রার্থনার জন্য বন্ধ থাকে যদিও বাকি জায়গাগুলি ঘুড়ে দেখা যায়। যেকোনো সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকে। 

সোনারগাঁও জাদুঘরের (পানাম নগর) প্রবেশের টিকেট মূল্যঃ

কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা।

ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা

আপনি যদি পানাম সিটি ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই কিছু ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা মেনে চলা উচিত। স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করুন, মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, আপনার আশেপাশের বিষয়ে সচেতন থাকুন, একজন স্থানীয় গাইড ভাড়া করুন, ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি স্পর্শ করবেন না বা অপসারণ করবেন না। 


কোন মন্তব্য নেই